আজ ২৬শে মার্চ। ৫৫তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত সংগ্রাম যেদিন শুরু হয়েছিল, সেই গৌরবময় দিন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ ও চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ডাক দিয়েছিলেন।
২৬ মার্চ তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান (পরবর্তীকালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি) নিজেই চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। পর দিন ২৭ মার্চ তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে আবারো স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। পরে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস আলাদা বাণী দিয়েছন।
সূচী অনুযায়ী, ২৬ মার্চ ঢাকাসহ সারাদেশে সকালে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠের পরিবার, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে জেলা ও উপজেলার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। দেশের সব বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র ও চলচ্চিত্র প্রদর্শন করবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করবে।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ফুটবল, টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট, কাবাডি, হাডুডু ইত্যাদি খেলার আয়োজন করা হবে। মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদান করা হবে।
এদিন সরকারি ছুটি। মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহিদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হয়েছে। দেশের সব হাসপাতাল, জেলখানা, শিশু পরিবার, বৃদ্ধাশ্রম, ভবঘুরে প্রতিষ্ঠান ও শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে।
এবার ৫৫তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করতে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধকে রংতুলির আঁচড়ে ও বাহারি রঙের ফুলের গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে। নানান রঙের আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে পুরো স্মৃতিসৌধ। গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধকে ধুয়েমুছে ঝকঝকে করা হয়েছে। সৌধের নিরাপত্তা জোরদারের জন্য স্থাপন করা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, স্বাধীনতা দিবস ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সাদা পোশাকে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি চার স্তরের নিরাপত্তা রক্ষায় তিন সহস্রাধিক সদস্য নিরাপত্তা দিতে কাজ করছেন।